বিশেষ প্রতিনিধি করোনাভাইরাস আর কিছু না হউক মানুষকে অনলাইন প্রযুক্তির জরুরি এবং কার্যকরতা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে হাড়ে হাড়ে। আর তাই এর থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরো স্বাস্থ্যখাতকে ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।তিনি বলেছেন, ডিজিটালাইজেশনের জরুরি এবং কার্যকারীতা অনুধাবন করেই এবার আমরা স্বাস্থ্য বিভাগকে ডিজিটেলাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটি করার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও নবনির্মিত আইসিইউ ২ এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে নতুন নতুন স্থাপনা হচ্ছে। স্থাপন হচ্ছে নানা আধুনিক যন্ত্রপাতিও। কিন্তু সেই তুলনায় চিকিৎসক এবং নার্স নেই। ফলে রোগীদের চাহিদামতো চিকিৎসা সেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে এ অভাব থাকবে না বলেও জানান তিনি। জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি অনেক হয়ে গেছে। কিন্তু ডাক্তার-নার্সের অভাব রয়েছে। যেটা আমাদের প্রয়োজন। যন্ত্রপাতি অনেক, কিন্তু মেরামত হয় না। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশকে আরও অনেক কাজ করতে হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে ভালো অবস্থানে নিতে হাসপাতাল তৈরি করাসহ বিভিন্ন প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি
ইতোমধ্যে মেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমরা বিশ্বে নজির সৃষ্টি করতে পেরেছি। বিশেষ করে টিকাদান কর্মসূচীতে। একদিনে এক কোটি ২০ লাখ টিকা প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণ করে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অর্জন করেছি। আর সারা বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম। আমরা এক কোটি ২০ লাখ টিকা এক দিনে দিয়েছি। সেদিকটি বিবেচনায় আমরা বিশ্বে এক নম্বর। বাই মিলে কাজ করেছি বিধায় আমাদের এই অবস্থান। সবার সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে।এসময় তিনি বলেন, দেশে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যক্ষ্মা রোগ এখনও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। একেবারে যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করতে না পারলেও আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আমরা জানতে পেরেছি গত বছরগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার লোক এ রোগে মারা যেত, এখন সেটা কমে বছরে ২৯ হাজার লোক মারা যায়। এ সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার আমাদের আরও কমিয়ে আনতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রামক ব্যাধিগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু অসংক্রামক রোগগুলো দেশে বেড়েছে। দেশে যত লোক মারা যায় তার ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে মারা যায়। যার মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, শ্বাসতন্ত্রের যে রোগগুলো রয়েছে তার অন্যতম কারণ তামাক। আমাদের দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ লোক তামাকজাত পণ্য গ্রহণ করে। এখন তামাক গ্রহণের সংখ্যা কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। পানের সঙ্গে তামাক গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হয়। পাশাপাশি আমাদের যে বায়ুদূষণ হয় সেটাও শ্বাসতন্ত্রের রোগের অন্যতম একটি কারণ। সুতরাং ভবিষ্যতে আমাদের এসব রোগের আরও ভালো চিকিৎসা দিতে হবে।জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নতুন করে ১৫টি আইসিইউ বেড উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মোট আইসিইউ সংখ্যা হলো ২৫টি। এর আগে এক নম্বর রুমে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিল ১০টি। দুই নম্বর আইসিইউ রুমে নতুন করে সংযোজন হয়েছে ১০টি ও হাসপাতালটির অ্যাজমা ভবনের পাঁচ তলায় সংযোজন হয়েছে আরও পাঁচটি আইসিইউ বেড। নতুন আইসিইউ বেড উদ্বোধন প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, নতুন আইসিইউ হাসপাতালে রোগীদের সেবায় নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এর মাধ্যমে রোগীরা হাসপাতালটি থেকে আরও উন্নত সেবা পাবেন।বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মু. সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশিদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম আ আজিজ প্রমুখ।